মাওলানা'র জানাযার কাফন...


জানাযার কাফন' জড়ানো রয়েছে কালিমায়ে তাইয়িবাহ সম্বলিত জামায়াতে ইসলামীর পতাকা ও পাকিস্তানের জাতীয় পতাকায়। প্রেসিডেন্ট জিয়াউল হক সামরিক ইউনিফরমের উপর হাতে কালো ব্যাজ পরেছেন। তিনি নির্দেশ দেন যে, কোনো সরকারি কর্মচারী ইচ্ছা করলে মাওলানার জানাযায় শরীক হতে পারে। জানায়ার পূর্ব মুহূর্তে স্টেডিয়ামের দৃশ্য হৃদয়বিদারক, বিস্ফোরণোন্মুখ। স্টেডিয়ামের ভেতরে প্রায় দশ লক্ষ মানুষ এবং ভেতরে ঢুকতে না পেরে বাইরে হাজার হাজার মানুষ বুক চাপড়ে মাতম করছে। 


লক্ষ কণ্ঠে ধ্বনিত হচ্ছে কালেমায়ে শাহাদত, শোকের মর্সিয়া-ইয়া সাইয়িদী, মুরশিদী, মওদূদী-মওদূদী। লক্ষ লক্ষ কণ্ঠের হাহাকার ও মর্সিয়া স্টেডিয়ামের চারধারে ধ্বনিত প্রতিধ্বনিত হয়ে উর্ধ্বাকাশ বিদীর্ণ করে ছুটে চলেছে আরশে পাকের দিকে। জনতা মাইয়েতকে এক নজর দেখার জন্যে, মাওলানার জাসাদে খাকীর (মাটির দেহ) শেষ দীদার লাভের জন্যে এবং হাত দিয়ে মাইয়েতের একটু পরশ লাভের জন্যে উন্মত্তের মতো সামনে অগ্রসর হওয়ার চেষ্টা করছে। নওজোয়ান স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী প্রাণপণ শৃঙ্খলা রক্ষা করার চেষ্টায় নিয়োজিত।


ইমামে কা'বা শেখ মুহাম্মদ বিন আব্দুল্লাহ বিন সাবিইয়িল জানাযার ইমামতি করবেন বলে ঘোষণা করা হয়েছিলো। কিন্তু মক্কা মুয়াযযামা থেকে রওয়ানা হওয়ার পূর্ব মুহূর্তে অনিবার্য কারণে তাঁর সফর বিলম্বিত করতে হয়েছে। অত:পর ইমামতির ভার দেয়া হলো কাতার বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাইস চ্যান্সেলর ড. ইউসুফ আবদুল্লাহ আল-কারযাবীর উপর। তিনি কায়রো জামিয়া আজহার থেকে ইসলামিয়াত ও দীনিয়াতে ডকটরেট লাভ করেছেন। প্রখ্যাত আলেমে দীন এবং মাওলানার প্রতি পরম শ্রদ্ধা পোষণ করেন। তিনি ইমামতির আগে জনতাকে লক্ষ্য করে বলেন,

 

সাইয়েদ মওদূদী তাঁর বিশ্বজনীন দাওয়াত ও চিন্তাধারার জন্যে চিরঞ্জীব হয়ে থাকবেন। তিনি তাঁর শতাধিক অমূল্য সাহিত্য রেখে গেছেন। আর রেখে গেছেন লক্ষ-কোটি রূহানী আওলাদ। আমি হাজার হাজার মাইল দূর থেকে আসিনি আপনাদেরকে কোনো সান্ত্বনার বাণী শুনাতে। বরং এসেছি একথা বলতে যে, দুনিয়ার কোটি কোটি মানুষ তাঁর চিন্তাধারায় আকৃষ্ট হয়ে কাজ শুরু করেছে। আমরা মাওলানার আন্দোলনকে নিয়ে জোর কদমে এগিয়ে চলবো। পাকিস্তানের জন্যে একমাত্র এটাই মঙ্গলজনক যে, এখানে সত্যিকার ইসলামি রাষ্ট্র কায়েম করা হোক। আপনারা যারা মাওলানার প্রতি ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা পোষণ করেন, তারা এর জন্যে সংগ্রাম অব্যাহত রাখুন।


ড. কারযাবীর ভাষণের পর লক্ষ লক্ষ কণ্ঠে ধ্বনিত হলো- সাইয়েদী মুরশিদী- মওদূদী-মওদূদী। স্টেডিয়ামের বাইরে অপেক্ষমান হাজার হাজার কণ্ঠে ধ্বনিত হলো- সাইয়েদী মুরশিদী-মওদূদী-মওদূদী। সে ধ্বনি প্রতিধ্বনিত হলো আকাশে-বাতাসে, চারধারের বৃক্ষরাজিতে, দালান-কোঠায়, প্রতিটি আনাচে- কানাচে।


*লেখাটি মরহুম আব্বাস আলী খান প্রণীত 'মাওলানা মওদূদী একটি জীবন একটি ইতিহাস' গ্রন্থ থেকে নেয়া।