মুহাম্মদুর রসূলুল্লাহ সা.-এর সমসাময়িককালে নিজস্ব নিরাপত্তার জন্য অস্ত্র বহন করা ছিলো বৈধ এবং সকল আরবই অস্ত্র বহন করতো। একদিকে যেমন আবু জাহিল ও তার অনুসারীদের হাতে তলোয়ার, বল্লম ও তীর ছিলো, তেমনিভাবে মুহাম্মাদুর রসূলুল্লাহ সা. ও তাঁর প্রতি ঈমান পোষণকারীদের হাতেও তলোয়ার, বল্লম, ও তীর ছিলো। উভয় পক্ষের অস্ত্রের মান ছিলো সমান।
ইসলামি আন্দোলন করতে গিয়ে মক্কায় মুহাম্মাদুর রসূলুল্লাহ সা. ও তাঁর সাথিরা নানাভাবে নির্যাতিত হয়েছেন। তাঁদের কেউ কেউ শাহাদাত বরণও করেছেন। কিন্তু বৈধ অস্ত্র থাকা সত্ত্বেও তাঁরা অস্ত্র ব্যবহার করেননি। আল্লাহর পক্ষ থেকে তাঁদের প্রতি নির্দেশ ছিলো 'কুফু আইদিয়াকুম' তোমাদের হাত গুটিয়ে রাখো। অর্থাৎ অস্ত্র ব্যবহার করোনা।
তখন আল জিহাদ ফি সাবীলিল্লাহ বা ইসলামি আন্দোলনের কাজ দাওয়াত ইলাল্লাহর মধ্যে সীমিত ছিলো। কিন্তু তের বছর পর যখন মদিনায় গণভিত্তি রচিত হলো ও ইসলামি সরকার গঠিত হলো তখন আল্লাহর নির্দেশে দাওয়াত ইলাল্লাহর সাথে সাথে আগ্রাসী শক্তির মুকাবিলার জন্য মুহাম্মাদুর রসূলুল্লাহ সা. ও তাঁর সাথিরা অস্ত্র ব্যবহার শুরু করেন। এ থেকে ইসলামি আন্দোলনের কর্মপন্থা ও ইসলামি সরকারের কর্মপন্থার মধ্যে যে পার্থক্য রয়েছে তা সুষ্পষ্ট হয়ে উঠে।
সাইয়েদ আবুল আ'লা মওদূদী রহ. ইসলামি আন্দোলনে অস্ত্র ব্যবহারের ঘোর বিরোধী ছিলেন। তাঁর প্রিয় সংগঠন জামায়াতে ইসলামীর স্থায়ী কর্মনীতিতে এই কথা সুস্পষ্টভাবে সন্নিবেশিত রয়েছে যে জামায়াতে ইসলামি উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য হাছিলের জন্য এমন কোনো কর্মপন্থা অবলম্বন করবে না যা সততা ও ন্যায়পরায়ণতার পরিপন্থী কিংবা যার ফলে ফিতনা-ফাসাদ সৃষ্টি হয়।
লক্ষ্য হাছিলের জন্য নিয়মতান্ত্রিক পন্থা অবলম্বন করা হবে। অর্থাৎ দাওয়াত, তানযীম ও তারবীয়াতের মাধ্যমে লোকদের চিন্তার সংশোধন করে ইসলামি বিপ্লবের পক্ষে জনমত গঠন করা হবে। দ্রষ্টব্য: গঠনতন্ত্র, জামায়াতে ইসলামী, পৃষ্ঠা-১২।
সাইয়েদ আবুল আ'লা মওদূদী বলেন: একটি নিয়মতান্ত্রিক ও গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় বসবাস করে নেতৃত্বের পরিবর্তনের জন্য কোনো অনিয়মতান্ত্রিক পন্থা অবলম্বন করা শরিয়াহর দৃষ্টিতে না-জায়েয।
একবার হজ্ব উপলক্ষে মক্কাতে বিভিন্ন আরব দেশ থেকে আগত যুবকদের এক সমাবেশে ভাষণ দিতে গিয়ে সাইয়েদ আবুল আ'লা মওদূদী বলেন: আমার শেষ উপদেশ হলো এই যে, গোপন তৎপরতা চালিয়ে এবং অস্ত্র ব্যবহার করে বিপ্লব সাধনের চেষ্টা চালানো উচিৎ নয়। একটি নির্ভুল ও সত্যিকার বিপ্লব গণআন্দোলনের মাধ্যমেই সাধিত হয়। প্রকাশ্যে ব্যাপকভাবে দাওয়াতের কাজ করুন, বিরাটভাবে মন-মগজ ও চিন্তার বিশুদ্ধি সাধনের কাজ করুন। মানুষের চিন্তা-ধারার পরিবর্তন করুন। নৈতিকতার অস্ত্র ব্যবহার করে মানুষের মনের উপর বিজয় লাভ করুন। চলার পথে যেইসব বাধা ও প্রতিবন্ধকতা আসবে সৎ সাহসের সাথে সেইগুলোর মুকাবিলা করুন। এইভাবে ক্রমান্বয়ে যেই বিপ্লব সাধিত হবে তা এমন স্থায়ী ও শক্তিশালী হবে যে, বিরোধী শক্তিগুলোর সৃষ্ট তুফান তাকে বিলুপ্ত করতে পারবেনা। তাড়াহুড়া করে কৃত্রিম পদ্ধতিতে কোনো বিপ্লব সাধিত হলেও যেই পথে তা আসবে, সেই পথেই তাকে বিলুপ্ত করে দেয়া যেতেও পারবে।