মাওলানা বলেন, খোলাফায় রাশেদার পরবর্তী সমাজ ব্যবস্থা ক্রমান্বয়ে ইসলামী মূলনীতি থেকে দূরে সরে যেতে থাকে। এ থেকে কেউ কেউ ইসলামী ব্যবস্থা ব্যর্থ হয়ে গেছে এই যুক্তির ইমারত দাঁড় করিয়েছেন এবং এও বলেছেন, যে ব্যবস্থা মাত্র ত্রিশ বছর চলার পর ওলট-পালট হয়ে গেছে। এখন আর তা প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করা নিষ্প্রয়োজন। এই প্রেক্ষিতে আমার কথা হচ্ছে, ইসলামী সমাজ ব্যবস্থা মাত্র ত্রিশ বছর প্রতিষ্ঠিত ছিল -এটা ঐতিহাসিক দৃষ্টিতে সম্পূর্ণ ভুল ধারণা। প্রকৃতপক্ষে ত্রিশ বছর পর্যন্ত ইসলামী সমাজ ব্যবস্থা পূর্ণ জীবনী শক্তি ও সকল বৈশিষ্ট্যসহ প্রতিষ্ঠিত ছিল। বিশ্বের ইতিহাসে কোন মতবাদ নিজের সকল বিধি-বিধানসহ পূর্ণাঙ্গভাবে একদিনের জন্যও প্রতিষ্ঠিত থাকতে পারেনি । এটা ইসলামী জীবন ব্যবস্থারই একটা বিরল বৈশিষ্ট্য যে, একাধারে তারপূর্ণ বিধি-বিধানসহ ত্রিশ বছর পর্যন্ত চলতে পেরেছে। আর শুধু একটি দেশেই নয়, বরং সমসাময়িক সভ্য দুনিয়ার এক বিরাট অংশে ইসলামী সমাজ ব্যবস্থা সুপ্রতিষ্ঠিত ছিল। বিশ্বের অপরাপর কোন মতবাদ অদ্যাবধি এ ধরনের দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারেনি।
দ্বিতীয়ত, একথাটাও ভুল যে, ত্রিশ বছর পর ওলট-পালট হয়ে গেছে।একথা সত্য যে, রাসূল (সা) ও খোলাফায়ে রাশেদার পরিচালিত প্রকৃত ইসলামী সমাজ ব্যবস্থা পূর্ণাঙ্গ রূপ নিয়ে ত্রিশ বছর পরবর্তী সময়ের রাষ্ট্র পরিচালিত হয়নি। কিন্তু একথা অস্বীকার করা যাবে না যে, এরপরও ইসলামী সমাজ দর্শন একটা আন্দোলনের আকারে অব্যাহত থাকে। মানুষের জীবনে এর প্রভাব ছিল সুস্পষ্ট। অধিকন্তু মুসলমানদের মধ্যে এমন একটা দল সর্বদা তৎপর ছিল, যারা পূর্ণাঙ্গভাবে ইসলামী জীবন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে মানব সমাজকে পুনর্গঠিত করার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। এ অবস্থাকে 'ব্যর্থতা'র সমার্থক আখ্যায়িত করা যায় না ইসলাম ব্যর্থ প্রমাণিত হয়নি বরং মানুষ ব্যর্থ হয়েছে।
উদাহরণ স্বরূপ স্বাস্থ্যবিধিকে ধরা যাক। অধিকাংশ মানুষ যদি স্বাস্থ্যবিধি অমান্য করে অসুস্থ হয়ে পড়ে, তাহলে কি স্বাস্থ্যবিধি ব্যর্থ হবে না মানুষগুলো? আপনারা ভালোভাবে পর্যালোচনা করে দেখুন, ইসলামের মূলনীতি সঠিক ও বাস্তবসম্মত কিনা। যেসব মানুষ এগুলোকে সঠিক বলে মনে করবে। তারাই এর বাস্তবায়নের জন্য চেষ্টা করবে। কোন ফেরেশতা এসে এগুলো বাস্তবায়িত করে দিয়ে যাবে না। এই পৃথিবীতে নাৎশীবাদ, কমিউনিজম এবং পুঁজিবাদী গণতন্ত্র চলতে পারলে ইসলাম কেন চলতে পারবে না? অপরাপর মতাদর্শের তুলনায় ইসলাম মানুষের স্বভাবের নিকটতর জীবনাদর্শ, বরং এটাই মানুষের জন্য স্বাভাবিক জীবনাদর্শ। অতএব, আপনাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে আপনারা সচেতন হোন। যে মতাদর্শকে আপনারা সঠিক ও বাস্তবসম্মত বলে মনে করেন, তাকে প্রতিষ্ঠার জন্য সচেষ্ট হোন।