পবিত্র কুরআনের অন্যত্র অন্য যে উক্তিটি করা হয়েছে, তা আল্লাহ্ খিলাফতের মর্ম কি সে ব্যাপারে সুস্পষ্ট আলোকপাত করে। আল্লাহ্ বলেনঃ “আমি আকাশ, পৃথিবী ও পাহাড় পর্বতের কাছে এ আমানত পেশ করেছিলাম, কিন্তু তারা কেউ এর ভার গ্রহণ করতে সম্মত হয়নি এবং তারা ভয় পেয়ে যায়। এর ভার মানুষ গ্রহণ করলো। বস্তুত সে যালেম ও অপরিণামদর্শী সাব্যস্ত হয়েছে।” [সূরা আহযাব : ৭৩]
এ আয়াতে আমানতের অর্থ নির্বাচনের স্বাধীনতা [Freedom of choice] এবং দায়িত্ব ও জবাবদিহী [Responsibility]। আল্লাহ এ উক্তির মর্মার্থ হলো, আকাশ, পৃথিবী ও পাহাড় পর্বতের এ দায়িত্বের গুরুভার গ্রহণ করার ক্ষমতা ছিলোনা। মানুষের পূর্বে এ দায়িত্ব গ্রহণের ক্ষমতাসম্পন্ন কোনো সৃষ্টিরই অস্তিত্ব ছিলোনা।
অবশেষে মানুষের আবির্ভাব ঘটলো এবং সে এ দায়িত্ব গ্রহণ করলো। এ বক্তব্য থেকে কয়েকটি তথ্য জানা যায়:
১. মানুষের পূর্বে আকাশ ও পৃথিবীতে কোনো সৃষ্টি এ দায়িত্ব গ্রহণ করেনি। মানুষই এ দায়িত্ব গ্রহণকারী প্রথম সৃষ্টি। সুতরাং আমানত গ্রহণের ক্ষেত্রে সে কারো স্থলাভিষিক্ত [Successor] নয়।
২. সূরা বাকারায় যে জিনিসকে খিলাফত বলা হয়েছে এখানে ‘আমানত’ শব্দ দ্বারা সেটাই বুঝানো হয়েছে। কেননা সেখানে ফেরেশতাদের সামনে প্রমাণ করে দেয়া হয়েছিলো যে, তারা খিলাফতের উপযুক্ত নয়, মানুষই তার উপযুক্ত। আর এখানে বলা হয়েছে যে, আকাশ ও পৃথিবীর কোনো সৃষ্টি আমার আমানতের ভার কাঁধে নেয়ার যোগ্য ছিলোনা, শুধু মানুষই তা বহন করতে পেরেছে।
৩. খিলাফতের তাৎপর্য আমানত শব্দ দ্বারা স্পষ্ট হয়ে যায়। আর এই দু’টো শব্দ একত্রে বিশ্ব প্রকৃতির অবকাঠামোতে মানুষের প্রকৃত অবস্থান নির্দেশ করে। মানুষ হলো পৃথিবীর শাসক ও পরিচালক। তবে তার এই শাসনকর্তৃত্ব মৌলিক নয়, বরং অর্পিত [Delegated]। সুতরাং আল্লাহ্ তার ওপর অর্পিত ক্ষমতা ও দায়িত্বকে [Delegated Power] আমানত বলে অভিহিত করেছেন। মানুষ এই অর্পিত ক্ষমতাকে আল্লাহ্ পক্ষ থেকেই ব্যবহার করে বলে তাকে খলীফা [Vicegerent] বলা হয়েছে। এ হিসেবে খলীফা বলতে সে ব্যক্তিকে বুঝায়, যে কারো অর্পিত বা প্রদত্ত ক্ষমতা প্রয়োগ করে। [Person exercising delegated power]।
[তরজমানুল কুরআন, জ্বিলকদ ১৩৫৩ হিঃ ফেব্রুয়ারী, ১৯৩৫।