অসাংবিধানিক ও অনিয়মতান্ত্রিক পন্থায় সমাজ পরিবর্তন সম্ভব কি?


মাওলানা বলেন: মনে করুন, অনেক মানুষ একত্রিত হয়ে আপনার স্বাস্থ্য ধ্বংসের কাজে লিপ্ত হলো। তাহলে আপনিও কি তাদের দেখাদেখি নিজের স্বাস্থ্য ধ্বংসের কাজে লিপ্ত হবেন? অসাংবিধানিক প্রক্রিয়ায় কার্যসিদ্ধির চেষ্টা করে তারা নিতান্ত খারাপ কাজ করেছে। যদি আমরাও সেই পথই অবলম্বন করি, তাহলে আমরাও খারাপ কাজই করবো। অসাংবিধানিক পন্থা অবলম্বনের দু'টি রূপ হতে পারে। প্রথমতঃ প্রকাশ্যরূপ, দ্বিতীয়তঃ গোপনরূপ। আপনারা ভেবে দেখুন, উভয় রূপের পরিণতি কি হতে পারে।


প্রকাশ্যভাবে অসাংবিধানিক পন্থায় যে পরিবর্তন সাধিত হবে, তার পরিণাম অত্যন্ত খারাপ হবে। এ ধরনের প্রচেষ্টার মাধ্যমে সমগ্র জাতি আইন ভঙ্গের প্রশিক্ষণই পাবে মাত্র। এরপর শত বছর প্রচেষ্টা চালিয়েও আপনারা তাদেরকে আইনের প্রতি অনুগত করতে সক্ষম হবেন না। ভারতে স্বাধীনতা আন্দোলনের সময় আইন ভঙ্গ করাকে কৌশল হিসেবে ব্যবহারের পরিণতি আপনারা অবলোকন করছেন। আজ বিশ বছর পরও ভারতের জনসাধারণকে আইনের প্রতি অনুগত করা সম্ভব হয়নি।


গোপন পন্থায় অবৈধ প্রক্রিয়া অবলম্বন করা হলে তার পরিণতি হবে আরো মারাত্মক। সংগঠনে কিছু লোক দন্ডমুন্ডের মালিক হয়ে বসে এবং গোটা সংগঠন বা আন্দোলন তাদের ইচ্ছানুযায়ীই পরিচালিত হয়। তাদের সঙ্গে ভিন্নমত পোষণকারীদেরকে তৎক্ষণাত শেষ করে দেয়া হয়। তাদের নীতির প্রতি আস্থাহীনতা প্রকাশ করাকে ভীষণ অসহনীয় ও অপছন্দনীয় মনে করা হয়। এখন আপনারা নিজেরাই চিন্তা করুন যে, এই গুটি কয়েক লোক যখন নেতৃত্বের আসনে সমাসীন হবে, তখন তারা কি জঘন্য স্বৈরাচারী হবে। আপনারা যদি এক স্বৈরাচারকে হটিয়ে অপর স্বৈরাচারকে নিয়ে আসেন তাহলে তাতে আল্লাহর সৃষ্টির জন্য কল্যাণকর কোন দিকটি রইলো?


আমার পরামর্শ সর্বদাই এই যে, আপনাদেরকে যদি অনাহারে-অর্ধাহারেও থাকতে হয়, জেল-জুলুমও ভোগ করতে হয়, গুলিও খেতে হয়, তবুও ধৈর্য ও বিনয়ের সাথে নিজেদের সংস্কার আন্দোলনকে খোলাখুলিভাবে আইন- কানুন, নিয়ম-শৃংখলা এবং চারিত্রিক সীমানার মধ্যে পরিচালিত করতে থাকুন। স্বয়ং রাসূল (সাঃ)-এর পন্থাও ছিল প্রকাশ্য এবং দাওয়াত দানের পদ্ধতি ছিল খোলাখুলি। জামায়াতে ইসলামী সর্বদা এ পদ্ধতিই অনুসরণ করেছে। প্রথম কয়েক বছর আমাদের উপর অন্যায়ভাবে আক্রমণ চলেছে, কিন্তু আমরা কখনো বেআইনী পন্থা অবলম্বন করিনি। ফলে তারাই সমাজে হেয় ও অপদস্ত হয়েছে। 


আমাদের উপর কেউ কোন কলঙ্ক আরোপ করতে পারেনি। এভাবে চলতে পারলে এর একটা মস্তবড় নৈতিক প্রভাব প্রতিফলিত হবে। স্বয়ং বিরোধী মহলের বিবেকও সাক্ষ্য দেবে যে, তারা অন্যায় কাজ করছে। আপনাদের প্রতি আমার আবেদন, আপনারা কখনো নিজেদের নৈতিক সুনাম বিনষ্ট হতে দেবেন না এবং যারা অসাংবিধানিক প্রক্রিয়ায় কাজ করার কথা ভাবে, তাদেরকে মোটেই উৎসাহিত করবেন না। পরিস্থিতি যাই হোক না কেন, আমাদেরকে তা শুধরাতে হবে। কিন্তু ভুল পদ্ধতিতে পরিস্থিতি শুধরায় না। বরং আরো বিগড়ে যায়।